স্ত্রী ঘর ছেড়ে চলে গেলে স্বামী তাকে ভরণপোষণের খরচ দিতে বাধ্য থাকেন। কিন্তু এবার স্ত্রীকে সাবেক স্বামীর ভরণপোষণের খরচ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। শুধু তাই নয়, স্বামীর পাওনা বকেয়া টাকার জন্য স্ত্রীর বেতন থেকে মাসে মাসে টাকা কেটে রাখতেও আদালত নির্দেশ দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) এই আদেশ দিয়েছেন ভারতের মহারাষ্ট্রের বোম্বে হাইকোর্ট। সাবেক স্বামীকে ভরণপোষণের খরচ দেওয়ার নির্দেশ পাওয়া ওই নারী একজন স্কুল শিক্ষিকা। শুক্রবার (১ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার বোম্বে হাইকোর্ট মূলত রাজ্যটির নান্দেদ নিম্ন আদালতের আগের আদেশ বহাল রাখেন। বোম্বে হাইকোর্ট বলছে, স্কুল শিক্ষিকা স্ত্রীকে অন্তবর্তীকালীন ভরণপোষণের খরচ হিসেবে প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা করে তার সাবেক স্বামীকে দিতে হবে।
আর ২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে বকেয়া থাকা ভরণপোষণের খরচ আদায় করতে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদেশ অনুযায়ী, মাসে মাসে ওই স্কুল শিক্ষিকার বেতন থেকে ৫ হাজার করে টাকা কেটে নিয়ে আদালতে জমা দিতে হবে।
সংবাদমাধ্যম বলছে, সাবেক স্বামীকে ভরণপোষণের খবর দেওয়ার আদেশের সময় বিচারপতি ভারতী ডাংরে ১৯৫৫ সালের বিন্দু বিবাহ আইনের ২৫ নম্বর ধারার কথা উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে সুপ্রিম কোর্টের আদেশের কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। এ ব্যাপারে নিম্ন আদালতের দেওয়া আগের আদেশ খারিজের জন্য ওই স্কুল শিক্ষিকার আবেদনও খারিজ করে দিয়েছেন বোম্বে হাইকোর্ট।
১৯৫৫ সালের বিন্দু বিবাহ আইনের ২৫ নম্বর ধারা বলা হয়েছে, আদালত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মোটা অর্থ কিংবা মাসিক কিংবা পর্যায়ক্রমে আবেদনকারীকে দিতে আদেশ দিতে পারে। দুইপক্ষের আবেদন শুনে বিচারপতি ডাংরে বলেছেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের ডিক্রি প্রযোজ্য না করে আইনের ২৫ নম্বর ধারার সুযোগকে সীমাবদ্ধ করা যাবে না।
মহরাষ্ট্রের নান্দেদ সিনিয়র ডিভিশনের দ্বিতীয় যুগ্ম বিচারকের ২০১৭ সালের আগস্ট মাসের এবং ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে গিয়েছিলেন ওই শিক্ষিকা। যেখানে অন্তবর্তী আদেশে বলা হয়েছিল, স্বামীকে ভরণপোষণের খরচ বাবদ মাসে ৩ হাজার টাকা করে দিতে হবে।
এছাড়া ২০১৯ ডিসেম্বরে নিম্ন আদালতের রায়ে বলা হয়েছিল, ২০১৭ সালের অগাস্টের আদালতের নির্দেশ পালনের জন্য শিক্ষিকার মাসের বেতন থেকে মাসে মাসে ৫ হাজার টাকা করে কেটে নিয়ে আদালতে জমা দিতে হবে।
এদিকে ওই নারী দাবি করেছেন যে, ১৯৯২ সালে তাদের বিয়ের হয়েছিল। তবে তিনি স্বামীর থেকে আলাদা থাকতেন এবং ২০১৫ সালে তিনি বিবাহ বিচ্ছেদের ডিক্রি পেয়েছিলেন। আর ভরণপোষণের আদেশ দেওয়া হয়েছে তার অনেক পরে। ফলে সেটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
তবে বোম্বে হাইকোর্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হিন্দু বিবাহ আইনের ২৫ নম্বর ধারা স্ত্রী কিংবা স্বামী উভয়ের জন্যই একটি বিধান। হাইকোর্ট আরও জানিয়েছে, আইনের ২৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী, স্বামী ভরণপোষণের জন্য যে আবেদন করেছেন তা যথাযোগ্য।